ভূতের গল্প - ভয়ের গল্প - গল্পের বই - আশ্চর্য ভয়
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বহু পাঠকই ভূতের গল্প পড়তে ভালোবাসেন। বিখ্যাত-অখ্যাত সব লেখকই ভূতের গল্প, ভয়ের গল্প লিখে গেছেন। বাঙালি পাঠক, ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে বেশি ভাবে না, কিন্তু ভয় পেতে সে খুব ভালোবাসে। ভূত ও ভয়ের গল্প বাঙালি পাঠকের অত্যন্ত প্রিয়। সাম্প্রতিক ফেসবুকের ভৌতিক গ্রুপগুলোর জনপ্রিয়তা সেই কথাই প্রমাণ করে। বেশ কিছু প্রকাশকও ভৌতিক সাহিত্যের বই পাবলিশ করে চলেছে। এবং সাহিত্যের এই ধারাটার হাত ধরে উঠে আসছে একঝাঁক নতুন লেখক।
লেখক বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে নতুন লেখক নন। তাঁর লেখা কিছু বই হল কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস বি-৩৪৫৬, কবিতার বই কবিতার নাম রোদ্দুর, reveries of a poet, হাস্যরসের বই ছাতাম্যান, ক্যাবলাপুর, ইত্যাদি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পত্র-পত্রিকা এবং ফেসবুকে ভূতের গল্পের বই লিখে আসছেন। তাঁর নবতম বইটা তাঁর প্রথম ভয় ও ভূতের গল্পের বই।
বইয়ের নাম
আশ্চর্য ভয়। এই বইতে রয়েছে ১২ টি অনন্য প্লটের ভৌতিক ও ভয়ের গল্প। লেখার ভাষা, গল্পের ফর্ম পাঠককে ভাবাবে, বিস্মিত করবে। নিচে আশ্চর্য ভয় বইয়ের বারোটি গল্পের সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হলঃ
১. ডাকটিকিটের অ্যালবাম - আপনার ডাকটিকিট জমানোর শখ আছে? বাঃ, চমৎকার। চয়নেরও ছিল। একসময় তার আগ্রহ গিয়ে পড়ে ভৌতিক বিষয়ের ওপর ডাকটিকিট জমানোর। ভূতনাথ বলে এক ভদ্রলোক তাকে একটি ডাকটিকিটের অ্যালবাম বেচতে চান। কিন্তু সেই অ্যালবামের ভৌতিক চরিত্রগুলো রাতের বেলায় কেমন যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এরপর কী ঘটে চয়নের জীবনে? সে ও তার স্ত্রী কি এই অভিশপ্ত ডাকটিকিটের অ্যালবাম থেকে বাঁচতে পারবে? নাকি...
২. মোহিনী - ঋষভকে পাগলের মতো ভালোবাসে মোহিনী। কিন্তু অসৎ চরিত্রের ঋষভ ভাবে যে কিভাবে মোহিনীর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। এদিকে ঋষভেরই অফিসের তিন সহকর্মী মোহিনীকে শারীরিকভাবে কামনা করে। মোহিনীকে ছল তারা করে জঙ্গলে নিয়ে যায়। জঙ্গলে শ্লীলতাহানির পরিস্থিতি তৈরী হয়। এদিকে জঙ্গলে আদিবাসীদের এক দেবতা বেশ জাগ্রত। তিনি কি মোহিনীকে সাহায্য করেন? ঋষভের শেষ পরিণতিই বা কী হয়? প্রশ্নের উত্তর আছে মোহিনী গল্পে। বিভূতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে দেবতা টাঁড়বারোর উল্লেখ ছিল। সেই টাঁড়বারোকে ভিন্ন আঙ্গিকে, প্রবল শক্তিশালীরূপে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে এই গল্পে।
৩. বাঙালি পল্টারগেইস্ট - এক মৃত ভারতীয় বিজ্ঞানীর বাড়িতে এসেছেন তাঁর রিসার্চের সহযোগী এক জার্মান বিজ্ঞানী। প্রয়াত বিজ্ঞানীর রিসার্চের মাধ্যমে আবিষ্কৃত যন্ত্রটি ছিল ভারী অদ্ভুত। সেটা ছিল প্রেতলোকের দ্বার উন্মুক্ত করবার যন্ত্র। জার্মান বিজ্ঞানী যন্ত্রটা দেখবার আগ্রহ প্রকাশ করেন মৃত বিজ্ঞানীর ছেলের কাছে। এরপর কী ঘটে? পরলোকের দ্বার কি সত্যি সত্যি খুলে যায়? এই পুরো ব্যাপারটার সাথে জার্মান ভূত সম্পর্কিত poltergeist কিভাবে জড়িত? জানতে হলে পড়তেই হবে গল্পটি।
৪. স্বপ্নখাদক - একটি মেয়েকে যৌন হেনস্থা করে একাধিক ব্যক্তি। বহু বছর পরে তাকে যৌন নিগ্রহ করা ব্যক্তিরা স্বপ্নের মধ্যেও এসে ভয় দেখাতে থাকে। মেয়েটা সমস্যা সমাধানে ডাক্তারের কাছে যায়। কী হয় তারপর? ডাক্তার কি রোগ সারাতে পারে? নাকি মেয়েটাকে ক্রমশ তলিয়ে যেতে সাহায্য করে সেই ভৌতিক স্বপ্নের জগতে? এই গল্পে গল্পের ভেতর রয়েছে অন্য গল্প। তার ভেতরেও আরও গল্পের হাতছানি। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো পাঠক প্রবেশ করবে ভয়াল রসের গভীরে এবং তলিয়ে যাবে দুঃস্বপ্নের জগতে৷
৫. প্রতিশোধ - নিশিকান্ত এক বুজরুক গুনিন। তার বুজরুকি ধরা পড়ে যায়, যখন গ্রামের নায়েবমশাইয়ের বড় মেয়ে মারা যায়। বুজরুকি ধরা পড়ে যাওয়ায় গ্রামের নায়েবমশাই নিশিকান্তকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। বনের মধ্যে সে সাধু ত্রিকালনাথের সন্ধান পায়। ত্রিকালনাথ তাকে পিশাচিনী সাধনার কথা বলেন। তবে সেই সাধনা অত্যন্ত কঠিন। দুর্বল নিশিকান্ত কি পারবে সেই সাধনার শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে? সে কি গ্রামের নায়েবমশাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সমর্থ হবে? এই গল্পে পিশাচিনী সাধনার প্রতিটা রাতের বিবরণ পাঠককে বিমুগ্ধ করবে।
৬. অভিশপ্ত শিলালিপি - নালন্দার সন্নিকটে এক বিখ্যাত বৌদ্ধবিহার। শত্রুদের দুর্গ ভেবে সেই সেই মহাবিহার ধ্বংস করেন বখতিয়ার খলজী (বা খিলজী)।
সেই মহাবিহারে বহু পুঁথি ও অন্যান্য সামগ্রীর ভেতরে রক্ষিত ছিল এক শিলালিপি। কী এই অলৌকিক শিলালিপি? এই অভিশপ্ত শিলালিপি ধ্বংসের অভিশপ্ত ফল কি ভুগতে হয় বখতিয়ারের সেনাদলকে?
সমগ্র গল্পটি ঐতিহাসিক তথ্য ও কল্পনার মিশেল। যাঁরা ঐতিহাসিক গল্প পড়তে ভালোবাসেন, তাঁদের ভালো লাগবেই।
৭. পাহাড়ে ঘুমিয়ে ঈশ্বর - লাভক্রাফটিয়ান ও Cthulhu নির্ভর কাহিনি। লেখক কল্পনা করেছেন কথুলু আসলে অন্য কোথাও নয়, বরং ঘুমিয়ে আছেন এই ভারতের বুকে। কী হয় যখন গল্পের কথক কথুলুর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারেন, কিন্তু প্রমাণ করতে পারেন না কারোর কাছে? কথুলু কি অদূর ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসবে?
৮. জলদস্যুর গল্প - এক কুখ্যাত জলদস্যুর ভূতের কাহিনি। দুই বন্ধু সমুদ্রের কাছে মাছ ধরার অভিযানে গিয়ে সেই অনভিপ্রেত ভূত দর্শন করে। তারপর কী ঘটে? জলদস্যু কি তাদের মেরে ফেলে? নাকি অলৌকিকভাবে দুই বন্ধু রক্ষা পায়?
৯. মুখোশের আড়ালে - পাহাড়ের গুহার ভেতর এক প্রাচীন আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর খোঁজ করতে যান এক অ্যানথ্রোপলজিস্ট। তারপর কী হয়? সেই জনগোষ্ঠী কি এখনও বেঁচে রয়েছে? কেন লুকিয়ে আছে তারা? মুখোশের তাৎপর্য তাদের জীবনে কতটা? মুখোশ কি তাদের কাছে শুভ না অশুভর প্রতীক?
১০. দুই বোন - চার বন্ধু জাপানের একটা দ্বীপে ঘুরতে যায়। তাদের ভ্রমণের সঙ্গী হয় দুই অচেনা মেয়ে। তারা নিয়ে যায় সেই চার বন্ধুকে এক নির্জন সমুদ্র সৈকতে। তারপর? এই সৈকত থেকে অদূরেই এক জাপানি শ্রাইন মন্দির। সেই মন্দিরের পুরোহিত আবার মেয়েদুটিকে মোটেও সহ্য করতে পারেন না। তার পেছনে কী কারণ?
ছেলে চারজনের ক্ষতি করতে চায় কে - মেয়ে দুজন নাকি পুরোহিত নাকি অন্য কেউ? এইসব নিয়ে জাপানি দানবদের গল্প। গল্পটা হতেই পারে জাপানের এক দ্বীপে আপনার মানসভ্রমণ।
১১. মরুভূমির শয়তান - la llorona নিয়ে জনপ্রিয় কাহিনি প্রচলিত। চলচিত্রও হয়েছে। এই মূল গল্পটাকে একদম ভিন্ন আঙ্গিকে পরিবেশন করা হয়েছে, যেখানে মেক্সিকোর কাউবয় 'ভাকেরো'-দের জীবনযাত্রাকে গল্পের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভূতের গল্প পড়তে পড়তে প্রচুর স্প্যানিশ শব্দের সাথে পরিচিত হবেন।
১২. নেপচুনের নেপথ্যে - চার মহাকাশচারী নেপচুন গ্রহ অভিযানে যায়। সেখানে গিয়ে তারা হঠাৎ আবিষ্কার করে অতীতের ব্যর্থ হওয়া অভিযানের মহাকাশযানকে। কেন এই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল? মহাকাশেও কি প্রেত আছে? সেই প্রেতশক্তির উৎস কী? আর মহাকাশচারীদের নেপচুন অভিযানের পেছনে কি গূঢ় কোনও রহস্য আছে? এই গল্পটা গ্রীক পুরাণ, স্পেস হরর এবং সায়েন্স ফ্যান্টাসির এক অদ্ভুত মিশেল। যাঁরা বলেন যে বাংলা সাহিত্যে স্পেস হরর তেমন লেখা হচ্ছে না, তাঁরা অবশ্যই এই গল্পটা পড়বেন।
উপরিউক্ত এই বারোটা গল্পটা নিয়ে বই 'আশ্চর্য ভয়'। প্রকাশকঃ পালক পাবলিশার্স। বইয়ের দাম ভারতীয় মূল্যে ২৯৯ টাকা। না কিনলে এই সময়কার সবচেয়ে ভয়ের গল্প সংকলন কিন্তু আপনি মিস করে যাবেন। হাড়হিম করা গল্পের সাথে এমন গল্পও আছে, যা আপনাকে ভাবাবে।
এই হরর গল্প সংকলনটা কিনতে গেলে ভারত ও বাংলাদেশের পাঠকরা দয়া করে পালক পাবলিশার্সের ওয়েবসাইটে যান, অথবা ফোন বা ইমেল করুন।
ফোনঃ
+91-9433320612
+91-9433320613
+91-8240727614
ইমেলঃ publisherspalok@gmail.com